Bhuter Golpo – দুই পেত্নীর গল্প – Horror Story Bengali

Bongconnection Original Published
7 Min Read
Bhuter Golpo - দুই পেত্নীর গল্প - Horror Story Bengali
Loading...

      ওরা দুজনেই শ্মশানের একটু দূরেই নদীধারের ছাতিম গাছের ডালে বসে পা দোলাচ্ছিল।
—তা দিদি, তোমার এমন দশা হল কি করে? আমি নাহয় ঐ শয়তান ছোঁড়াটার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। বাড়ির লোক বিয়ে দিতে রাজি হল না। দুজনেই আত্মহত্যা করব বলে রেললাইনে মাথা দিয়েছিলাম। সেই শয়তান উঠে পড়েছিল ট্রেন আসছে দেখেই। আর আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম দুজনে একসাথে স্বর্গে যাচ্ছি। যখন মরে গিয়ে পেত্নী হলাম দেখলাম সে ব্যাটা শয়তান  মরেনি। একদিন রাতে দেখি সে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে একটা মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করতে করতে বেরিয়ে এল। তারপর  সেই মেয়েটাকে  বাইকের পিছনে বসিয়ে নিয়ে আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল।




বড় পেত্নী অবাক হয়ে বলল, তুই রেস্টুরেন্টের সামনে কী করছিলি!
     ছোটো পেত্নী তার লম্বাআআ জিভে আসা জলটা সুড়ুৎ করে মুখের ভেতরে টেনে নিয়ে বলল, হেঁ  হেঁ, ওখানে আমি মাঝে মাঝে গন্ধ নিতে যাই। আসলে যখন মানুষ ছিলাম তখন চিকেন পকৌড়া আর ফিশ কাটলেট আমার খুব প্রিয় ছিল। তাই গন্ধে অর্ধভোজন সারার জন্য মাঝে মাঝে ওই রিভার ভিউ রেস্টুরেন্টের পাশের ছাতিম গাছটাতে বসি।
—তা বাপু গন্ধে ভোজন সারার দরকার কী?
মাঝেমধ্যে লুকিয়ে চুরিয়ে এক দুটো তুলে নিয়ে  খেতেও তো পারিস।
–দুখের কথা আর বোলো না দিদি। উপায় থাকলে কি খেতাম না ভাবছ? ট্রেনের চাকাতে একটা দাঁতও আস্ত আছে নাকি! সব ঐ শয়তানটার জন্য।
    নাকি সুরে কাঁদতে শুরু করল ছোটো  পেত্নী।
—কাঁদিস না বোন কাঁদিস না। কী আর করবি বল। তুই বরং দাঁতগুলো বাঁধিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা কর। ছাতিমপুরের শ্মশানে একটা দাঁতের ডাক্তার মামদো হয়ে এসেছে। ব্যাটার বৌটা নাকি অন্য কারো সঙ্গে পালিয়েছে। সেই দুঃখে ঝুলে দিয়েছিল ব্যাটা। তোরা সব সত্যিই পাগল। ওসব প্রেম ভালবাসার জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হব ভেবেছিলি। ওসব প্রেম ট্রেম ফালতু কথা বুঝলি।
—হুম গো দিদি, সেটা মরে গিয়ে বুঝলাম। শুনলাম  সেই শয়তানটার বিয়ে ওই মেয়েটার সাথে।
—তুই জানলি কী করে!
—ইয়ে মানে, যতই হোক মায়া কাটাতে তো  পারিনি। তাই মাঝরাতে গিয়ে ওই শয়তানের জানালার বাইরে বসে থাকতাম গো দিদি। সে আর কী বলব! সারারাত মোবাইলে তার সাথে কথা বলে। সেই ভোর রাতে ঘুমাতে যায়। আমি তো ভোরের আলো সহ্য করতে পারি না। কোনো কোনোদিন শয়তানটা ঘুমোবার আগেই চলে আসতে হত। পরশু রাতে শুনলাম ওই মেয়েটাকে ওই শয়তানটা বিয়ে করবে। রাতে ভিডিও কলও করত মেয়েটাকে। আমার কান্না পেত গো দিদি।
—এখন আর কেঁদে কী হবে?  মরার দরকার কী ছিল বাপু! এবার তো বুঝতে পারছিস, বাড়ির লোক কেন এমন ছেলের সাথে বিয়ে দেয়নি।




ছোটো পেত্নী মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকে। বড় পেত্নীর মায়া লাগে। আহা বেচারা!
—এক কাজ কর ছোটো।
–কী কাজ?
—আজ সন্ধ্যার দিকে পার্লারে যাব ভাবছি। তুই ও আমার সাথে যাবি। চেহারাটা তোর একেবারেই ভেঙে গেছে।
    পার্লারের নাম শুনেই ছোটো পেত্নীর  চোখের কোটরের   আলো চকচক করে ওঠে। নিজের চুলহীন মাথাটাতে একবার হাত বোলায়। বড় পেত্নী বুঝতে পেরে বলে ওঠে, একটা কাকিমা ওপারের শ্মশানে পার্লার খুলেছে। কলকাতার খুব নামী পার্লার ছিল ওর। তোর চুল বসানোর ব্যবস্থা করে দেব।
    দাঁতবিহীন মুখে একগাল হাসি ছড়িয়ে পড়ে ছোটো পেত্নীর মুখে।
—তুমি খুউউউব ভালো  গো দিদি।  তা দিদি তোমার এমন দশা হল কী করে?
—দুখের কথা কি আর বলব ভাই, আমাকে বাড়ি থেকে দেখাশোনা করে ভালো ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের দোষ। বরটা ভালোই ছিল। আমার কথাতেই ওঠবস করত। কিন্তু শাশুড়িটা ছিল বড় দজ্জাল।শাশুড়ি আর আমি   দুজনে দিনরাত লড়াই চলত। একদিন শাশুড়িটাকে ভয় দেখানোর জন্য ঘুমের ট্যাবলেট খেলাম। ইচ্ছে করে কম ট্যাবলেট  খেয়েছিলাম। সেবার বেঁচে গেলাম। নার্সিংহোম থেকে ঘুরে এলাম। বর শাশুড়িকে দোষ দিল। শাশুড়িটাও ছাড়বার মানুষ নয়। শ্বশুর অনেক টাকা রেখে গেছে বুড়ির নামে। সেই দেমাক। ঝগড়া আরও বাড়ল। এবার একটু বেশি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলাম। ব্যাস, টেঁসে গেলাম। মাঝের থেকে বরটার লাভ হল। কদিন একটু মনমরা, কান্না কান্না ভাব। তারপর ব্যাটাচ্ছেলে অফিসেরই এক আইবুড়ির সাথে সংসার পেতেছে। ভাগ্যিস আমার ছেলেপুলে ছিল না। নইলে যে কী অবস্থা হত কে জানে!
—পুরুষ মানুষকে আবার বিশ্বাস করে গো দিদি। বউ বেঁচে থাকতে যতই সোহাগ দেখাক, বউ মরে গেলে ভুলতে আড়াই দিন। বেঁচে থাকতে কত দেখেছি। কথাতেই বলে, ভাগ্যবানের বউ মরে।
–তা যা বলেছিস।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বড় পেত্নী ।
একটা মড়া নিয়ে একদল লোক হরিবোল দিতে দিতে আসছে। দুজনেই শ্মশানের শ্যাওড়া গাছটাতে এসে বসে পা দোলাতে থাকে। বড় পেত্নি বলে, কে এল রে? মনে হচ্ছে বিশেষ কেউ। স্বর্গ রথে করে নিয়ে আসছে।

       গাড়িটা এসে থামে। একটা সুন্দর করে সাজানো বউয়ের মৃতদেহকে চারজন মানুষ ধরে নামায়। একটা লোক খুব কান্নাকাটি করছে। সম্ভবত বৌটির স্বামী।  একটু পরেই বৌটিকে চিতায় তোলা হল। ইলেকট্রিক চুল্লির ভেতর মৃতদেহ ঢুকে যেতেই হঠাৎ ছোটো পেত্নীর পাশে এসে কেউ যেন বসল। চোখের কোটরের  লাইটের পাওয়ার একটু বাড়িয়ে ছোটো পেত্নী পাশে তাকিয়ে  দেখল সেই বউটি। একটু অবাক হয়ে বলল, তা ভাই তুমি এখানে কী করে?
      নতুন পেত্নী বলে উঠল, ঐ যে ব্যাটাছেলেটা কাঁদছে দেখছ, ওটা আমার বর। ওর জন্যই বিষ খেয়ে নিলুম।
     ছোটো পেত্নী অবাক হয়ে বলল, মানুষটা তো ভালোই মনে হচ্ছে। কত কান্নাকাটি করছে তোমার জন্য। দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ ভালবাসে তোমাকে।
—ভালবাসে বলেই তো….
  নতুন পেত্নীর  কথা শেষ হবার

আগেই বড় পেত্নী অবাক হয়ে বলে উঠল, তারজন্য মরে দিলে!
—কী আর করব। বাচ্চা কাচ্চা  হয়নি বলে শ্বশুর  বাড়ির লোকজন খুব কথা শোনাত। ডাক্তাররা বলেছেন  আমার শরীরে সমস্যা আছে। মা হতে পারব না । অথচ আমার বরটার খুব বাপ হওয়ার শখ গো। আমি বেঁচে থাকলে ও অন্য কারোকে বিয়ে করতে পারবে না। আমাকে খুব ভালোবাসে কিনা । আমিও বড্ড ভালবাসি মানুষটাকে । ওকে সুখী দেখতে চাই গো । তাই মরেই দিলুম।
      বড় পেত্নী চোখের কোটরের আলোগুলো দপদপ করে বলে উঠল, মর…ণ। বোকা কোথাকার!

NB: অনুগ্রহ করে ,পেত্নীদের উক্তিগুলিতে আপনারা চন্দ্রবিন্দু যোগ করে পড়বেন।😎

=

Share This Article