খোঁপা – বাংলা গল্প – Bengali Story – Bangla golpo

Bongconnection Original Published
3 Min Read
 বিয়েবাড়ি যাব আমরা। সন্ধ্যে সাতটায় লগ্ন। বিয়েটা আমার পিসির ছেলের।
বিয়েবাড়িটা অবশ্য খুব কাছে নয়। আমি ও আমার কন্যাসম বৌমা ঠিক করলাম আজ খোঁপা
বাঁধব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। রিয়াকে ফোন করে ডেকে পাঠালাম। রিয়া আমাদের
‘বিউটিশিয়ান’। প্রতিনিয়ত বাড়িতে যাতায়াত। রিয়া এসে বলল, ‘পিসির (মানে আমার)
খোঁপা আমি বেঁধে দেব, কোন অসুবিধা হবে না। কারণ চুল বেশ লম্বা কিন্তু
বৌদির খোঁপা আমি বাঁধতে পারব না।’ আমি ওকে জোরাজুরি করতে ও বলল, ‘বেশ আমি
চেষ্টা করছি’। যতবারই বৌমা মুনিয়ার ওই ছোট চুলে খোঁপা বাঁধত তবারই ‘ফস’ করে খুলে যায়। আমি রাগ করে বললাম, ‘দূর অন্য পার্লারে গেলে
হত’। এতে রিয়ার খুব অভিমানে লাগল। প্রায় দুডজন হেয়ার ক্লিপ দিয়ে ও মুনিয়ার
খোঁপা বাঁধতে লাগল। যাইহোক কিছু একটা দাঁড়াল। এদিকে আমার কর্তা হিটলারের
মতো তাড়া দিতে শুরু করেছেন। বললেন, ‘কি দরকার ছিল এত কসরৎ করে চুল বাঁধার।
আমাকে পনেরো মিনিট হেঁটে ক্লিপ আর মালা কিনে আনতে হল। যত্ত সব!’ আমি অবশ্য
যথারীতি ওর কথায় কোন পাত্তা দিলাম না। ফুলের মালা দিয়ে দুজনের খোঁপাই
চমকপ্রদ। আমার ছেলে আবার দুজনের ছবিই তুলে রাখল। তারপর তাড়াতাড়ি সাজ গোজ
করে আমরা বেরোলাম। বিয়েবাড়ি পৌঁছে খানিকক্ষণ বেশ ভালই কাটল। সবাই বৌমাকে
খুব প্রশংসা করছে, অবশ্য ও সত্যি খুব সুন্দর দেখতে। সবাই আমাদের খোঁপার খুব
তারিফ করল। একজন তো বলেই ফেলল, ‘মুনিয়া, তোর তো খুব ছোট চুল, কি করে
বাঁধলি এত বড় খোঁপাটা?’ মুনিয়া হাসল। বিয়ে শুরু হল। যে ঘরটায় আমরা বসেছিলাম
সবাই সেখান থেকে চলে গেল বিয়ে দেখতে। আমিও গেলাম কিন্তু মুনিয়াকে খুঁজে
পেলাম না। ওই ঘরটায় ফিরে গেলাম। আশ্চর্য হয়ে দেখলাম আমার বৌমা ঘরের
কার্পেটের ওপর হামাগুড়ি দিচ্ছে।


আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কিরে হঠাৎ হামাগুড়ি দিচ্ছিস কেন? তোর না
কোমরে ব্যথা।’ ও উঠে দাঁড়াল। দুচোখ ভর্তি জল। তারপর ফিসফিস করে বলল, ‘কি
সর্বনেশে খোঁপা রিয়া বেঁধে দিয়েছে বলত? আমার তো খোঁপা খুলে গেছে। অতগুলো
ক্লিপ মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাই তো তুলছিলাম।’

আমি আস্তে আস্তে
গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। তারপর শাশুড়ি আর বৌমার চলল হামাগুড়ি দিয়ে
কাঁটা আর ক্লিপ খোঁজার অভিযান। চুলে স্প্রে করা। মাথার চুল জট পাকিয়ে
গেছে। সে একেবারে জটাধারী যোগিনীদের মত অবস্থা।

যা পাওয়া গেল তাই
সই। কোনরকমে ওর চুল সযত্নে আঁচড়ে একটা ‘হেয়ার ক্লিপ’ লাগিয়ে দিলাম। আমার
পিসতুতো বোন এসে বলে বসল, ‘হ্যাঁরে মুনিয়া, তুই কি ম্যাজিক জানিস। এই দেখে
গেলাম তুই খোঁপা বেঁধেছিস আবার এখন দেখছি তুই জটাওলা চুলে পনিটেল করেছিস।
মাথার ওপরে ফুলের মালাটা জড়িয়ে অবশ্য ভাল লাগছে।’

কোনরকমে খেয়ে আমরা বাড়ি চলে এলাম। প্রতিজ্ঞা করলাম অনুষ্ঠান বাড়িতে চুল খুলে যাব বা পনিটেল করে যাব। কিন্তু খোঁপা নৈব নৈব চ।

Share This Article