রাঙিয়ে দিয়ে যাও – Romantic Bengali Love Story – Valobashar Golpo

Bongconnection Original Published
5 Min Read
রাঙিয়ে দিয়ে যাও - Romantic Bengali Love Story - Valobashar Golpo
Loading...

**************************************************************

আজ অনেকদিন পর চুল’টা বেশ পরিপাটি করে বেঁধেছে চন্দ্রিমা,
কানের ধার ঘেঁষে কিছুটা নুইয়ে পড়েছে কেশ লতিকা..
 ছোট্ট পিঙ্ক রংয়ের টিপ্’টা খুব যত্ন করে কপালে পড়ার সময় এক ঝলক দেখে নিলো নিজেকে আয়নায় .,
 ভ্রু দুটি কেঁপে উঠলো বার কয়েক.
আজ যেন মন’টা কেমন উথাল পাথাল করছে সেই ভোর থেকেই..
আজ যে দোল পূর্ণিমা !
আজ সায়ন্তন আসবে তাকে রং মাখাতে, .
***********************************************************************
বুকের আঁচল সড়িয়ে, স্লিভলেস ব্লাউসে নিজেকে
প্রাণ ভরে আরও একবার, দেখে নিলো সে আয়নায় . .
আজ দস্যিপনা’র চরম সীমান্তে পৌঁছাবে সায়ন্তন.
সায়ন্তন ‘টা বরাবর’ই ভীষণ ফাজিল আর দুষ্টু.
তা নাহলে, বৌ’কে ফুল সজ্জায় কেউ টু’পিস মাইক্রো আউটফিট গিফ্ট করে ?
লজ্জায় সেদিন লাল হয়ে গিয়েছিলো নববধূর বেশে চন্দ্রিমা.
তবে মানুষটা, তার প্রাণ., কোনো কারণে খিটিমিটি হলে, যখন চন্দ্রিমা উপোষ করে,না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তো,,
সেদিনের ফাজিল মানুষটাও চুপচাপ শুয়ে পড়তো তার কোমর জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো.
গভীর রাতে হঠাৎ ভাঙা ঘুম চোখে যখন,চন্দ্রিমা পাশ ফিরত,দেখতো তার স্বামীর চোখে জল থৈ থৈ করছে..,
আর সেই জলে গলে যেত,চন্দ্রিমার জমাট বাঁধা অভিমান.
প্রেম সায়রে হাবুডুবু খেতে খেতে ঠোঁট বসাতো সে সায়ন্তনের কপালে.
********************************************************************
কলেজের দিনগুলিতে,.ভীষণ ভালো বন্ধু ছিল ওরা,ঝগড়া আর খুনসুটি’তে ভড়িয়ে রাখতো দুজন দুজনকে.
 হয়তো তাই,সায়ন্তন কোনো কারণে কলেজে না এলে,আঁধারে ঢাকা পরে যেত মিষ্টি চন্দ্রিমার মুখখানি.
 কলেজের ফাইনাল ইয়ারে হোলির দিন, আবীর মাখিয়ে , একদম ভিন্ন্য আঙ্গিকে সে প্রপোস করেছিল চন্দ্রিমা কে..প্রেমের প্রস্তাব
শুনে ,গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো তার .
*******************************************************************
সায়ন্তন কে পছন্দ করতোনা,এরকম মেয়ে বোধয় তাদের ডিপার্টমেন্টে কেউ ছিলোনা. কিন্তু সায়ন্তন ছিল, ঝোড়ো হাওয়ার মতো,অধরা.. ধরা দিতোনা কারুর প্রস্তাবে,তামাশার ছলে সব কিছু কাটিয়ে উঠতো.
আর সেই ছেলেটি কিনা শেষমেশ তাকেই !…
 অবাক হয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল সেদিন চন্দ্রিমা সায়ন্তনের দিকে,..প্রিয় বন্ধুর প্রস্তাব’টি আর ঠেলতে পারেনি সে .
দিন কেটে যেত মুহূর্তে,…কিন্তু রাত্রি’টা যেন বেইমানি করতো দুজনের সাথে .. কাটতেই চাইতোনা.
এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়েক-টা বছর.
****************************************************************** 
এক তুমুল ঝড় জলের রাতে,একটি পিকনিক স্পট’এ একাত্ম হয়ে গিয়েছিলো দুটো নোনতা শরীর..
 শুরুতে পিছ’পা হয়েছিল চন্দ্রিমা, কিন্তু সায়ন্তনের আদরমাখানো আবেদনে কেমন যেন,মাতাল হয়ে গিয়েছিলো তার শরীর-মন.
নির্লিপ্ত ভাবে,নিজের সর্বস্ব দেওয়ার পর,অজানা কোনো ভয়ের চৌকাঠে দাড়িয়ে,, কেঁদে, ফোলা ফোলা গাল দুটো ভাসিয়েছিল মেয়েটি..
বন্ধু কে এভাবে কাঁদতে দেখে স্থির রাখতে পারেনি সায়ন্তন নিজেকে . .সূর্য ওঠার প্রথম প্রহরেই,মন্দিরে গিয়ে সিঁদুর পড়িয়ে এক কাপড়ে বাড়িতে এনে তুলেছিল তাকে.
চন্দ্রিমা যেন বোবা হয়ে গিয়েছিলো এসব কান্ডকারখানা দেখে .
…হঠকারিতায় করা এমন কাজের জন্য সায়ন্তন’কে সহ্য করতে হয়েছিল অনেক অপমান,হজম করতে হয়েছিল কাছের মানুষজনেদের কাছ থেকে পাওয়া মানষিক যন্ত্রনা..
  তা সত্বেও পিছ পা হয়নি সে.  ছাড়েনি সে চন্দ্রিমার হাত .
 শেষমেশ সদয় হয়েছিল বাড়ির লোকজন…
স্বস্তির চাদরে নিঃস্বাস ফেলেছিলো একজোড়া রঙ্গিন তাজা প্রাণ.


*********************************************************************
সায়ন্তনের চোখে,মুখে আর বন্ধুসুলভ ব্যবহারে যেন রং মেশানো থাকতো ,তাই তাকে ভালোবেসে দিন প্রতিদিন রঙিন হয়ে যেত,চন্দ্রিমার দেহমন..
গত বছর  অফিসের এক বিশেষ কাজে সেই যে বাইরে গিয়েছে মানুষটি,তার ফেরার আর নাম’ই নেই..কি এমন কাজ কে জানে?
আজ দীর্ঘদিন পর সে ফিরছে,…রং খেলতে খুব ভালোবাসে সে.. আজ সে নিয়ে আসবে দীর্ঘদিনের জমিয়ে রাখা উষ্ণ আদর আর অপরিসীম রঙিন ভালোবাসা.
নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ড্রয়িং রূমে চলে এলো চন্দ্রিমা, আগে থেকেই বসে আছে সায়ন্তন সেই চিরাচরিত গালভরা হাসি নিয়ে..
**********************************************************************
বুকে জড়িয়ে ধরলো চন্দ্রিমা ফটো ফ্রেম’টি..পাগলের মতো চুম্বনে ভরিয়ে দিচ্ছিলো ফ্রেম’এ বন্দি সায়ন্তন কে ..অঝোর ধারায় ভাসছে চন্দ্রিমার দুচোখ,সায়ন্তন সত্যি’ই অধরা. প্রমান করলো আরও একবার.
গতবছর আজ-ই ,অফিসের এক আপাতকালীন কাজে তাড়াহুড়োতে বেড়িয়ে পড়েছিল বাড়ি থেকে সে , একবারের জন্য’ও . রাস্তার ওপার থেকে ছুটে আসা লাগামহারা বাস’টি লক্ষ করতে পারেনি. পিষে গিয়েছিলো সায়ন্তনের গোটা শরীর..
সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে চন্দ্রিমার..বার বার উঠে গিয়ে খোলা জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ,দেখছে প্রস্বস্ত রাস্তাটার দিকে প্রানপন. এই বুঝি সায়ন্তন ঘরে এসে ঢুকবে, জাপ্টে ধরে,খুনসুটি করবে তার খোলা কোমরে, রাঙিয়ে দেবে তার কায়া, তার হৃদয় কে,সেই সেদিনের মতো.
_______________________________________________



Share This Article