জীবন যেরকম | Jibon Jerokom | Bangla golpo

Bongconnection Original Published
7 Min Read
জীবন যেরকম | Jibon Jerokom | Bangla golpo
Loading...



আজকাল ফেসবুকে বলুন আর ফেসবুকের বাইরে বাস্তব জীবনে বলুন বন্ধুদের কিংবা অনেক কম বয়সী ছেলেদের বলতে শুনি মেয়েরা টাকা চেনে, মেয়েরা টাকার জন্যে ভুঁড়ি ওয়ালা কাকুদের বিয়ে করে। আরো নানা জিনিস। কথা গুলো শুনতে বড় হাস্যকর লাগে এবং বোকা বোকা।


প্রথমত আসি মেয়েদের টাকাওয়ালা বরকে বিয়ে করার কথায়। এদের কথায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলছি হ্যা মেয়েরা একটি ঠিকঠাক উপার্জন করা ছেলেকে বিয়ে করতে চায়৷ কারণ বিয়ের পরে অধিকাংশ মেয়েকে বিভিন্ন কারণে কেরিয়ারের সাথে কম্প্রোমাইজ করতেই হয়৷ মুখে যতই নিজেদের নারীবাদের প্রতিমূর্তি বলি কিংবা যতই নারী স্বাধীনতা নিয়ে লাফালাফি করি বিয়ের পরে আমাদের ভবিতব্য, ইচ্ছে অনিচ্ছা অনেকটাই শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ওপর। তাদের মনোগ্রাহী হয়ে ওঠার বাসনা আমাদের থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই হয় বাড়ির শাশুড়ি মা একটু পুরোনো দিনের মানুষ হলে বৌমার অফিস যাওয়া পছন্দ করে না। বরং বাড়ির সেই বৌটি আদর যত্ন পায় যে কিনা গৃহবধূ হয়ে ঘরের কাজকর্ম সামলাচ্ছে। এরকম নির্দশন নেহাতই কিছু কম নয়। তাই মেয়েরা নিজেদের এবং নিজেদের উত্তরসূরীদের কথা ভেবে উপার্জনক্ষম পুরুষকেই বিয়ে করতে পছন্দ করে৷ আমাদের মায়েরাও তাই করেছিল বলেই আজ আমাদের হাতে দামী স্মার্টফোন উঠেছে। দামী ব্র‍্যান্ডেড জামা উঠেছে। নাহলে তো ফুটপাথেই থাকতাম।



আবার কিছু মেয়ের ভাগ্য অঞ্জলি পিল্লাই কিংবা গৌরী খানের মতও হয়৷ যেমন ধরুন মেয়েটি স্কুলে পড়াকালীন এমন একটি ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ালো যার বাড়িতে টালি, সাইকেল ভাঙ্গা।  ছোটবেলায় কে টাকা দেখে প্রেম করে? খুব কমজনই করে। যার সাথে গল্প করতে ভালো লাগে, দেখতে ভালো লাগে, সময় কাটাতে ভালো লাগে তার সাথেই সম্পর্ক শুরু হয়। কিন্তু দেখা গেল কালচক্রে মূর্তিমানটি একটি ভালো কেরিয়ার করে বসে আছে। মাসে হয়ত আশি হাজার এক লাখ উপার্জন করছে। কিংবা তারও বেশি। বেশ নাম টাম হয়েছে৷ তার দৌলতে মেয়েটিকেও বেশ সবাই সম্মান করছে। তাহলে মেয়েটি কি করবে? সেই ছেলেটিকে ছেড়ে অন্য একটি গরীব ছেলে খুজতে বেরবে প্রেম করার জন্যে বা বিয়ে করার জন্যে? নাকি নিজের প্রেমিকের সাথেই বিয়ে করবে? আমার তো শুভবুদ্ধি এটাই বলে মেয়েটি যার কষ্টের সময় পাশে ছিল তার ভালো সময়ে তার পাশে দাড়ানোর অধিকার একমাত্র তার আছে৷ কারণ যে ভাঙ্গা সাইকেলে ঘোরার সাহস দেখায়, পরবর্তী সময় সে অডি বা মার্সিডিজ কিনলে তাতে একমাত্র অধিকার মেয়েটিরই।



এবার আসি দ্বিতীয়ত কথায়, মেয়েরা ভুঁড়িওয়ালা কাকু বিয়ে করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছেলেরা রিলেশনে আসার আগে নিজেকে যেভাবে মেইনটেইন করে রিলেশনে এসে তার বিন্দুবিসর্গও করে না। বরং মনে এক অদ্ভূত প্রশান্তি নিয়ে ঘুরে বেরায় যে মাছ তো জালেই আছে এত কষ্ট কে করে। ফলে অফিসে বা সাইটে কাজ করে,  খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম করে শারীরিক গঠনের ষষ্ঠীপূজো করে ভুঁড়ি বাগিয়ে বসে থাকে৷ আর তাছাড়া বাঙালির ছেলেদের ভুঁড়ি হওয়াটা খুব স্বাভাবিক, কারণ যে পরিমান ভাত আমরা খাই সারাজীবনে তাতে যে ভুঁড়ি হবে সেটাই স্বাভাবিক। রিলেশনে আসার আগে যে ছেলেটির ভুঁড়ি নামক বস্তুটি ছিল না, দশ বারো বছর রিলেশন চলার পর দেখালো মহাশয় মনের সুখে ভুড়ি বাগিয়ে মাথায় টাক ফেলে কাকু হয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন। মেয়েটি এবং ছেলেটি একই বয়স হওয়া সত্ত্বেও তার ভুড়ি টাক সব দেখা যাচ্ছে। তো মেয়েটি কি করবে? নিজের প্রেমিককে বিয়ে না করে ভুড়ি ছাড়া ছেলেকে বিয়ে করতে দৌড়াবে? যে না আমার প্রেমিকের ভুড়ি হয়ে গেছে তাই একে বিয়ে করা যাবে না তাই ভুড়ি ছাড়া খোজো বলে। দাবী কি?



তৃতীয়ত প্রায়শই দেখি আজকাল সোশাল মিডিয়ায় কিছু ব্যক্তি কালো ছেলের পাশে ফর্সা সুন্দরী মেয়ে দেখলে এমন সব ক্যাপশান দিয়ে পোস্ট করে যেন মনে হয় ছেলেটি কালো হয়ে কি না কি অপরাধ করে ফেলেছে। দাবী কি ভাই? কালো মানুষ প্রেম করবে না? নাকি কালো হয়ে প্রেম করা বিশাল কিছু অপরাধ? নাকি গায়ের রঙ ফর্সা হলে চরিত্রহীনের সাথে প্রেম করতে হবে? আসল দাবী কি? গায়ের রঙ দেখে কি কখনো কাউকে ভালোবাসা যায়? সেটা কি আদৌ সম্ভব?



রূপ দেখে বা টাকা দেখে যেটা হয় সেটা প্রেম নয় নিষিদ্ধ পল্লীর ন্যায় দেহব্যবসা৷ এবার তাই সোশাল মিডিয়ায় উল্টোপাল্টা জিনিস পোস্ট করার আগে দুবার ভাবুন যে মজা করতে গিয়ে কারো অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে ফেলছেন কিনা? সমাজে এখনো বহু সম্পর্ক আছে যেগুলো দশবছর এগারো বছর বারো বছরও টিকে আছে, প্রতিমাসে একবার করে সিরিয়াস ব্রেক আপ এবং রোজ খুটখাট ঝগড়া লেগেই আছে, তবুও কেউ কাউকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবে না। লং ডিস্ট্যান্সেও উভয় পক্ষ লয়্যালটি মেইনটেইন করছে ।  এখনো প্রচুর সম্পর্ক আছে যাদের কাছে রূপ এবং টাকা কোনোটাই মানে রাখে না। এই সব সম্পর্কগুলোকে সম্মান করতে শিখুন।  আর টাইমপাস করা ছেলে মেয়েদের দেখে পৃথিবীর সবাইকে কালিমা লিপ্ত করার নোংরা প্রয়াস থেকে দয়া করে বিরত থাকুন। কোনো লিঙ্গের একজন খারাপ মানে সবাইকে গাল দেওয়া যুক্তি হীন৷ যে খারাপ তাকে গালাগাল করুন। মেয়েরা টাকা চেনে, ছেলেরা শরীর চেনে এসব বিকৃত মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে নিজেদের মানসিক চিকিৎসা করান। নিজেরাও সুস্থ থাকুন অন্যদেরও সুস্থ থাকতে দিন। আপনাকে আপনার গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে পালিয়েছে কিংবা আপনাকে আপনার বয়ফ্রেন্ড বেড অব্দি নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছে বলে আপনি হোলসেল সবাইকে খারাপ বলে বেরাবেন এ কেমন মানসিক বিকৃতি? সবাই শপিং বিল ভরিয়ে যেমন বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে দেয় না, তেমনি সবাই পার্কে বা হোটেলে নিয়ে গিয়ে শরীর ভোগ করে গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে না। কেউ কেউ বিয়ের পিড়ি অব্দি সম্পর্ক নিয়ে যায়, সসম্মানে বাড়িতে তোলে স্ত্রীর মর্যাদায়। তাকে সাপোর্ট করে উৎসাহ দেয়৷ এই ধরনের যুগল গুলোর সম্মানটা অন্তত পক্ষে প্রাপ্য। নিজেরা নিজেদের মানসিক বিকৃতির ঠেলায় তো আমাদেরও একই তালিকাভুক্ত করছেন মহাশয় মহাশয়ারা৷ আমরা কি এলিয়েন নাকি? আমরাও তো মানুষ, আমাদের চোখে দেখতে পান না আপনারা????



কমেন্ট সেকশনে লিখে জানান আপনার অভিমত …



আপনার মূল্যবান সময়ে আমাদের লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ ….

ভালো লাগলে শেয়ার করুন …



আমাদের আরও কিছু লেখা…




১। প্রেমের সমীকরণ | Premer Somikoron | Bangla Article


২। নারী তুমি তিলোত্তমা – নারী দিবসের বিশেষ লেখা | women’s Day story- Nari Tumi tilottoma




৩। তুমি কি আমার হবে ?

Share This Article