আমারও পরানো যাহা চায় – Valobashar Golpo – Bengali Romantic Love Story

Bongconnection Original Published
6 Min Read
আমারও পরানো যাহা চায় | Amaro Porano Jaha chay | Bangla golpo
Loading...

তনিমার আজ দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী। স্বামীর সাথে একটা বড় রেস্টুরেন্টে  খেতে ঢুকেছে সে ।দুজনে সামনাসামনি চেয়ারে বসল।
ওয়েটার তখনো অর্ডার নিয়ে যায় নি। তনিমা শাড়ির ভাজটা ঠিক করে নিয়ে পাশের টেবিলে তাকালো। কিন্তু মুখ ফেরাতে পারলো না।
ফেরাবে কি করে.? পাশের টেবিলে তার খুব কাছের একজন নিজের স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছে। তার ভালবাসার মানুষ অনন্ত,তার প্রাক্তন। চার বছর ধরে ভালবেসে এসেছে তারা। অথচ,আজ কেউ কারো নয়।
ইতোমধ্যেই ওয়েটার চলে এসেছে। তনিমার স্বামী অপূর্ব তনিমার হাত ধরে বলল–
–কি অর্ডার দেবো বলো।
কাপা কাপা গলায় সে উত্তর দিল–
–তোমার যা ভালো লাগে,তাই দাও..

পাশের টেবিলে কারো কাটা চামচ পড়ে যাওয়ার শব্দ হল। তনিমা ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলো-অনন্ত ওর দিকে চেয়ে আছে। আসলে তনিমার গলার আওয়াজ পেয়েই অনন্তের হাত থেকে চামচটা পড়ে গেছে। চামচের থেকে কিছু খাবারের টুকরো অনন্তের স্ত্রীর শাড়িতে ছিটকে পড়লো। সেদিকে কারো খেয়াল নেই। দুজনেই খুব সাবধানের সাথে দৃষ্টিপাতন করে নিল।
অপূর্ব উঠে দাঁড়িয়ে বললো —
–তনিমা তুমি বসো, আমি গিয়ে দেখি মনের মত কিছু পাই কিনা…

তনিমা খুব সযত্নে অনন্তের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। অপূর্ব চলে যাবার মুহুর্ত কয়েক পরেই অনন্তের স্ত্রীও ওয়াশরুমে গেলো কাপড়টা পরিষ্কার করে নিতে।

তনিমা অনন্তের দিকে চেয়ে জোরপূর্বক হাসি দেবার চেষ্টা করলো।কিন্তু ততক্ষণে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। সে অন্যদিকে ফিরে তাকালো।
কিন্তু, মনকে মানাবে কি করে.? আবারো ঘুরে তাকাতে গিয়ে দেখলো অনন্ত তার সামনের চেয়ারে।
তনিমা মাথা নিচু করে রইলো।

–কেমন আছো,তনিমা.??

–কেমন দেখতে চেয়েছিলে.?

–উপহাস.? নাকি অনুযোগ.?

–তার কোনোটারই অভিপ্রায় বা রুচি নেই। আশার চেয়ে বেশিই ভালো আছি।

–হুম,দেখলাম তো মাত্র। সবসময় এটাই চেয়েছি।

–কৌতুক শুনতে ভাল লাগছে না। কারণ, আমার জন্য ভাল থাকার শুভ কামনা তোমার মুখে বড্ড বেমানান লাগছে…

–আসলেই তাই। ক্ষমা চেয়ে আর তোমাকে বিড়ম্বনায় ফেলতে চাচ্ছি নে।

–ফিরিয়ে দেবার কি খুব প্রয়োজন ছিল.? হুম,বেকার ছিলে তুমি। আমি তো বলিনি আমার দ্বায়িত্ব নিতে,শুধু বলেছিলাম আমার নাকের নথের মালিক হও।

–তখন ক্যারিয়ারটাই বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো।আজ ক্যারিয়ার আছে,সংসার আছে। স্ত্রীর অফুরন্ত ভালবাসা আছে। কিন্তু ভেতর থেকে আকুতি ভরা ভালবাসাটা নেই। কোথায় যেন কি একটা মিস করি.!!

–মানিয়ে নাও। জীবনটা এমনি, মানিয়ে নিতে হয়। আমাকে তো মানাতে পারলে না, কিন্তু টিকে থাকলে হলে অন্য কাউকে তো মানাতেই হবে।

–আজও কি অনন্তের জন্য চিন্তায় প্রেসারের প্রব্লেমটা হয়.??

–সময় কোথায়.? অনন্তের জন্যে শুধু ভালবাসা ছিল,কিন্তু আমার স্বামী অপূর্বর জন্য রয়েছে ভালবাসা, শ্রদ্ধা,সম্মান আর দ্বায়িত্ব। সেগুলো সামলিয়ে সময় পাবো কোথায়.? মাঝে মাঝে দুজনে বারান্দায় বসে ওর বুকে মাথা রেখে চাঁদ দেখি। ওই চাঁদের দিকে তাকিয়ে কখনো কখনো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে , এই যা …

–তবে কি আজও মনের অজান্তেই আমাদের ভালবাসাটা রয়ে গেছে.?

–ভালবাসা আবার হারায় নাকি.? তবে সেটাকে ওভারকাম করতে অপূর্ব অনেক হেল্প করে।

–সে জানে.!!

–ভালবাসার অনুভূতি লুকোনো যায় কি.?

–যা কিছু হয়,ভালোর জন্যেই হয়। আমি সত্যি তোমার অযোগ্য…

–ভেবে দেখিনি কখনো। তবে অপূর্ব একজন স্বামী হিসেবে যথেষ্ট উপযুক্ত।

–কিছুই যখন অগোচর নয়।তবে পরিচয় করানো যাবে কি.?

–যেটুকু যন্ত্রনা আছে,তোমার আমার মাঝেই থাক। ওদের ভেতরে আতংক ছড়িয়ে লাভ কি.??

–তোমার ফোন নাম্বারটা পাওয়া যাবে .? খোজ-খবর নিতাম। ভয় নেই, ফাটল ধরাতে নয়,শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকবো।

–আমি ভাল আছি,অনন্ত। তুমি ভাল থেকো।

–বেশ। ভাল থাকাটা সহজ,ভালবাসাটা সহজ নয়।ভীষণ জটিল। তুমিও ভাল থেকো।

–হুম।সাবধানে যেও। খুব বেশি কষ্ট যখন হবে,বারান্দায় বসে দুজনে চাঁদ দেখো।আমি চাঁদনী হয়ে পাশের ফুলের টবে জমে থাকা জলে চিকচিক করে উঠবো। খুজে নিও তোমার ভাল থাকার কারণ হিসেবে..

–আসি তবে…

অনন্ত চলে গেলো।তনিমা তখনো তার যাওয়ার পথে চেয়ে আছে। হুশ হলো অপূর্বর ডাকে…

—আর ইউ ওকে,তনিমা..?

–অনন্তকে দেখলাম…

অপূর্ব কয়েকমুহুর্ত তনিমার মুখের দিকে চেয়ে রইলো। তারপর ওর হাত দুটো ধরে বলল—

–আমি নিজের হাতে খাইয়ে দেই.??

তনিমার ঠোটের কোনে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। অপূর্বর হাতটা চেপে ধরে  তনিমা বলে উঠলো , তুমি আমায় ঠিক কতটা ভালোবাসো ?
অপূর্বর চামচ দিয়ে খাবারটা তনিমার মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বললো যতটা ভালোবাসলে তোমার সব দুঃখ , অভিমান , যন্ত্রনা দূর হয়ে যাবে ঠিক ততটা ।
তনিমা খাবার টা মুখে নিয়ে চেয়ারে বসেই অপূর্বর কাঁধে মাথা রাখলো , আর মনে হলো পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী বোধহয় সে ই …

রেসুরেন্টের নরম আলোর মাঝে তাদের দেখে মনে হলো অনেক বিরহের পর যেন প্রেমিক – প্রেমিকা তাদের মুহূর্তকে রঙিন করছে ।
দু – একজন অবশ্য আর চোখে তাদের দিকে তাকালো , তাতে কি এসে যায় !
 বাইরে তখন সন্ধ্যায় , বসন্তের মিষ্টি হওয়া আর দূরে যেন কোথায় বেজে উঠলো …
                       “আমারও পরান যাহা চায়
                       তুমি তাই , তুমি তাই গো “…
                     

আমাদের অন্যান্য গল্প –


1 . সৌভাগ্যবতী – Souvaggoboti |বাংলা প্রেমের গল্প


2. অপেক্ষার শেষ প্রহরে


3. ফুলশয্যা


4. ভালোবাসার রং – Valobashar Rong

Share This Article