গুবলু আর মধুর গল্প এর আগেও আপনাদের শুনিয়েছি।এখন শুনুন বসন্ত উৎসবের মরশুমে তাদের কথা………
দোলের আগের দিন বিকেলে গুবলুর সাথে কফিশপে দেখা করে মধু বলল-
-কিরে গুবলু??কি খবর তোর? খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিস নাকি? অনেক রোগা লাগছে?
-বলছিস তাহলে ডায়েটিং করে কাজ হচ্ছে বল?
-তাই তো দেখছি।
-তাহলে আজকে একটু নিয়মবিরুদ্ধ স্যান্ডউইচ থেকে আমরা ব্রাউনির দিকে শিফ্ট করি, কফি শপে ও বসন্ত এসে যাক্।
-আচ্ছা তাই বল নাহয়। আর কাল কে কি প্রোগ্রাম?
-সেরম কিছু না।তবে দোলে মায়ের হাতের কষা মাংসটা মাস্ট। তেমন হলে আজ রাতে কিনে নিয়ে চলে যাব, কাল বড্ড বেশি লাইন হবে।দুদিনের জন্য ডায়েটিং মাথায় থাক।
-উফফফ। তুই না ??খাওয়া ছাড়া আর কিছু বুঝিস না।
-আরে না না বুঝি বুঝি।সব বুঝি।আর একটা সলিড প্রোগ্রামও বানিয়ে রেখেছি। ইচ্ছে আছে, এবার একজনকে ভালোবাসার রং এ লাল মানে রেড ….ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো….।।।
-আচ্ছা??
-ক্রিসমাসের দিন তার কৃতকর্ম সেই আলতো মিষ্টি কিস টার সুদে-আসলে বদলা নেওয়ার দিন চলে এসেছে।। মানে বসন্ত এসে গেছে …..
আবির ছাড়াই মধুর মুখ লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে উঠল।মুচকি হাসি হেসে বলল থাক ‘থাক আর গান গাইতে হবে না।’
হাসির প্রশয় পেয়ে টেবিলে রাখা মধুর সুন্দর হাতের ওপর আলতো চাপ দিল কৌশিক ওরফে আমাদের গুবলু।
-শোন একটা প্রবলেম আছে।
-আবার কি প্রবলেম?
-বাড়িতে কাল সত্যনারায়ন পুজো আছে।আমার চন্দননগরের পিসি এসেছেন।সব জোগাড় করছে, কাল সকালে বাবা,পিসি দুজনেই থাকবে। ঠাকুরমশাই আসবে, কিছু লোকজন ও আসবে। বাড়ি থেকে বের হবার কোন সিন নেই।তাই তোকেই আমাদের বাড়িতে আসতে হবে।
-এই কেলো করেছে।তোর বাবার সামনে যাওয়া আর সিংহের মুখে পড়া একি ব্যাপার।
-তাহলে আর কি করবো বল? আমি পাড়াতে ফোন করে টুবাই, শিউলি, বাবু সবাইকে নেমন্তন্ন করেছি। তুইও ওদের সাথে চলে আসিস। পুজো হয়ে গেলে বাবার পায়ে আবির দিয়ে প্রণাম করিস।তারপর যদি বাবা পারমিশন দেয় তাহলে না হয় আমি ও একটু রঙিন হব তোদের সাথে।
পরের দিন ধরে সকালে হাল্কা আকাশী রঙের পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পড়ে পকেটে লাল আবিরের প্যাকেট নিয়ে কৌশিক ঠিক সময়ে হাজির হল মধুর বাড়ি। ওদের বাড়িতে বেশ গুরুগম্ভীর পরিবেশ। এর মধ্যে খালি মধুর সাজটা কৌশিকের চোখে আটকে গেল। এত সুন্দর মধুকে কোনদিন লাগেনি।সব সময় তো বস্তার মতো জিন্স আর ঢলঢলে টপ পরেই ওকে দেখতে অভ্যস্ত। হলুদ জামদানি, লাল টিপ খোলা চুলে, মোহময়ী লাগছিল। কেমন যেন নেশা হয়ে যাচ্ছিল কৌশিকের ওকে দেখে।যাইহোক নির্বিঘ্নে পুজো মেটার পরে এলো আসল সময়।যখন মধু কনুই দিয়ে ঠেলে কৌশিককে ওর বাবার কাছে পাঠিয়ে দিল।
একমুখ হাসি নিয়ে, নামমাত্র আবির নিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো স্বনামধন্য ডাক্তার অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে।।উনিও বেশ হেসে একটা টিকা পরিয়ে দিলেন কৌশিকের মাথায়। ওই রকম একটা পার্সোনালিটি মুখোমুখি হওয়া কি মুখের কথা।কোন রকমের ঢোক গিলে বলল
-কাকু তাহলে আমরা এখন আসি, আর আপনি যদি বলেন তাহলে একটু মধু কেও সঙ্গে নিয়ে যাই আমাদের।
-মধু কে?ও তো সারা দিন ধরে অনেক পরিশ্রম করেছে, এখন কি আর ও রঙ খেলবে নাকি?
তখন পাশ থেকে শিউলি বলে উঠল ‘নিশ্চয়ই খেলবে কাকু।দোল তো আর রোজ আসেনা ।আমরা আর বেশিক্ষণ নেব না, এই আধঘণ্টার মধ্যেই যে যার বাড়ি ফিরে যাবো।’
যাক শিউলি ঠিক সময় কাজটা করেছে ওকে কাল রাতেই ফোন করে কৌশিক ম্যানেজ দিতে বলেছিল। পিজ্জা ট্রিট দিতে হবে এবার ওকে।
তারপর সকলে মিলে পাড়ার কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে গেল।ফুল ফুটুক নাই বা ফুটুক আজ যে বসন্ত।
সবার প্রথম কৌশিক লাল আবিরে মধুর সুন্দর মুখশ্রী টা আরো সুন্দর করে দিল।দুহাতে আদর করে যে রঙ লাগালো সেই রঙ মুখের চেয়ে বেশি অন্তরকে স্পর্শ করল।মধু গুবলুর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে বলল- মুখ থেকে সব রং উঠে গেলেও, এই লাল রং ওদের জীবন থেকে যেন কোন দিন হারিয়ে না যায়।
ওদের এই অবস্থা দেখে টুবাই আওয়াজ দিল-
“কিরে তোরা আবার কবে থেকে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস??”
এবার কৌশিক বলল “জল যখন খাব তখন ডুবে ডুবে খাওয়াই ভালো। ভেসে ভেসে খেয়ে আর কি লাভ বল।”
-শালা গুবলু।তুই তো প্রেমে কবি হলি রে??
মনের সুখে আবির মাখালো ওরা সবাই একে অপরকে। লাল, নীল, হলুদ আর গোলাপি রঙে ভরে উঠলো প্রত্যেকের সুন্দর সুন্দর মুখগুলো।
আবির মাখানোর পর্ব শেষ হতে শুরু হলো রং খেলার পর্ব। শুরুটা অবশ্য মধুই করল। সবুজ রঙে হাতটা রাঙিয়ে মধু দিল ছাপ তার প্রিয় গুবুলর গোলগাল মুখে গলায় আর বলল
‘ আমার জন্য কিন্তু ভালোবাসার রং সবুজ, চিরনতুন, চিরসবুজ, চিরস্থায়ী।’
গুবলুর মুখটা কাঁচুমাচু হয়ে গেল।
-কিরে কি হলো? মুখটা এরকম কেনো?
-আমায় যত খুশি রং লাগা। কিন্তুু আমার পাঞ্জাবীটা ছেড়ে দে। মা বারণ করেছিল কিন্তু কেতা দেখানোর জন্য পড়ে চলে এলাম তোদের বাড়ি।এই রং লাগা পাঞ্জাবি পড়ে বাড়ি গেলে দুপুরের মাংসটাও মিস হয়ে যাবে। এবার কি হবে? মা বলে দিয়েছে পাঞ্জাবি কাচতে পারবে না।আমি তো ভেবেছিলাম শুধু আবির খেলা হবে, তুই যে মিচকে শয়তান, রং কিনে তৈরি ছিলিস।।কি করে বুঝবো বল?
-আহা উনি শুধু আমার রং মাখাবেন, আর আমি ওনাকে ছেড়ে দেব।তুই কি ওই গানটা শুনিস নি নাকি ,মধু গুন গুন করে ধরল “ও শ্যাম যখন তখন, খেলো না খেলা এমন ধরলে আজ তোমায় ছাড়বোনা।” কাল কফি শপ থেকে ফেরার পথে কিনে এনেছিলাম বাদুরে রং টা।তোর মত বাঁদরের জন্যই এই রঙ ই একদম ঠিক।আর পাঞ্জাবীটা বরঞ্চ আমাকেই দিয়ে দিস,আমিই কেচে দেবো। কাকিমাকে আর কতদিন জ্বালাবি? এবার থেকে তোর পাঞ্জাবি তো আমাকেই কাচতে হবে।
শুনে আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরল গুবলু তার মধুকে।