বিশেষ বসন্ত – Golpo Bangla – Bengali Story – Valobashar Golpo

Bongconnection Original Published
15 Min Read
বিশেষ বসন্ত - Golpo Bangla - Bengali Story - Valobashar Golpo
Loading...

         লিখেছেন-পারমিতা চক্রবর্তী (ভট্টাচার্য্য)




 সকাল সকাল রাহুল বেরিয়ে যাওয়ার পর তনয়া একটু বেলায় বেরোয় তার আইটি সেক্টরের কাজের জন্য | ইস্টহ্যাম্প থেকে ওঠেন পরমেশ্বর তার বউমা তনয়ার সাথে | লিভারপুল স্টেশনে তনয়া নেমে যাওয়ার পর পরমেশ্বর কখনও নামেন টিউব স্টেশন , কখনো বা ওয়েস্ট মিন্সটার | দুটো স্টেশন থেকেই খুব ভালভাবে টেমস ও তাকে ঘিরে মানুষের প্রানচন্চঞলতা উপভোগ করা যায় | টাওয়ার ব্রীজের দুপাশের দ্বীপশহরে প্রানের কলতানে চিরকালীন বসন্ত অনুভূত হয় |

বিগত মাস দুয়েক থেকে এটাই তার রোজের রুটিন | কতক্ষনই বা একা বাড়ীতে কাটানো যায় | তাই এই প্রতিদিন দুপুরে একটু বেরিয়ে পড়া , রাহুল ছুটির দিন তাকে নিজে নিয়ে গিয়ে এলাকাটা চিনিয়ে দিয়েছে |

আজ প্রায় ২ মাস হল এখানে এসেছেন পরমেশ্বর , ছেলের কাছে | উইকএন্ড ছাড়া ছেলে , বউমা , নাতি কারোর সাথেই সময় কাটানোর উপায় নেই | সারাদিনে বেশ কয়েকবার চোখের দেখা মাত্র হয় তাদের সাথে , তাই ওদের কাজের দিনগুলোতে বউমা তার বেলায় অফিস যাওয়ার পথে পরমেশ্বরকে প্রায়ই এগিয়ে দেন  জমজমাট এই ওয়েস্ট মিন্সটারে | তার সাথে তনয়া প্যাকিং টিফিনও দিয়ে দেয় |  আর এর প্রায় ঘন্টা তিনেক বাদে ছেলে অফিস থেকে ফেরার পথে তাকে বাড়ী নিয়ে যায় | আজও সেরকমই একটা দিন | আর এই টাওয়ার ব্রীজ এলাকাটা পরমেশ্বরের বেশ মনে ধরে গেছে |

জলের স্রোতের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকলে চিরকালই ভাবুক হয়ে যান পরমেশ্বর | অবলীলায় ভেসে যান অতীতে |  বহরমপুরের  কৃষ্ণনাথ কলেজের দিনগুলোর ছবি যেন হঠাৎ ফুটে উঠল | সত্যিই কৃষ্ণনাথ কলেজের কথা ভাবলেই যে কোনও প্রাক্তনী নস্ট্যালজিক হয়ে পড়তে বাধ্য | অক্সফোর্ডের শৈলীতে নির্মিত এই কলেজের স্হাপত্য সত্যিই অপূর্ব | কলেজ ক্যাম্পাসে পুরোনো পুরোনো বড় বড় নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি তার ঐতিহাসিক স্হাপত্যের সাথে একেবারে মানানসই | ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে চলছে ভাগীরথি , যেমন অক্সফোর্ডের পাশেই টেমস | শোনা যায় ঐতিহাসিক স্হাপত্যের হুবহু আদলে করা যায়না বলে নির্মানের পর এই বিল্ডিংয়ের কোনো সিড়ির অংশ শুরুতেই একটু ভেঙে দেওয়া হয়েছিল | করিডোর দিয়ে আনাগোনা করা প্রানোচ্ছ্বল নবীন নবীনাদের আওয়াজ এখনো যেন শুনতে পাচ্ছেন পরমেশ্বর |

রাহুলের ফোনে সম্বিত এল | জানালো আর আধঘন্টার মধ্যেই আসবে | রাহুলের কর্মক্ষেত্র খুব কাছেই | ব্যাঙ্কিং সেক্টরে কর্মরত বেশীর ভাগেরই অফিস হল টিউব রেলের এই ‘ ব্যাঙ্ক ‘ স্টেশন | ব্যাঙ্ক মানে প্রধানত রিভার ব্যাঙ্ক , নদী তীর | এখানে আবার প্রায় সব ব্যাঙ্কেরই শাখা রয়েছে | ব্যাঙ্ক এরিয়া থেকে রাহুল প্রায়শই হেঁটেই চলে আসে পরের স্টপেজ  ওয়েস্ট মিন্সটারে , কখনো কোনো অফিসের বন্ধু তাকে ড্রপ করে দেয় , এরপর পিতা পুত্র একসাথে টিউব রেল ধরে সোজা ইস্টহ্যাম্পের বাড়ীতে ফেরে |

কোনোদিন বাড়িঘর ছেড়ে বিদেশে এসে এভাবে টেমসের ধারে নিঃসঙ্গ সময় কাটাতে হবে ভাবেননি কখনো | কত আনন্দে নানা রঙে  কেটেছে জীবনের ৭০ টা বছর , হয়ত শেষ জীবনে চেনা পরিবেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে এইভাবেই কাটানোটা লেখা ছিল | নইলে এবারে মাইল্ড একটা আ্যাটাক হওয়ার পর আর ছেলের কথা ফেলতে পারলেন না কেন | নবনীতা চলে গেছে আজ প্রায় বছর সাতেক | তারপরও তো বিদেশে ছেলের কাছে আসবেন ভাবেননি |

 একার সংসারের হতাশা যাতে খুব বেশী কাবু করে না ফেলে তাই রোজের জীবনকে একটু বদলে নিয়েছিলেন | এতদিন বলে বলেও নবনীতা যা করাতে পারেননি , সেই মর্নিংওয়াকও শুরু করেছিলেন | সকালে মাঠে গেলেই অনেকের সাহচর্য্য পাওয়া যায় | সন্ধ্যেতে নিয়ম করে স্টেশনে চা খেতে যেতে যেতে দুটি বুড়োদের দলের সক্রিয় সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন | মাঝের সময় ঘুরে ঘুরে সময় নিয়ে বাজার করে , পাড়ায় একটু বেশীই মেলামেশা করে কাটাতেন | রান্নার লোককে বলাই থাকত সবার তাড়াহুড়োর কাজ সেরে যেন আসে | তাতে বাড়ী এসে অনেকক্ষন একা থাকার সময়সীমা কিছুটা কমত | ইদানীং শরীরটাও ভালো লাগছিল না | তাই ডিসেম্বরে ছেলে বাড়ী এলে আর গোপন না রেখে বলেই ফেললেন  ঘটে যাওয়া আ্যাটাকের কথা | এবারের ছেলের জোড় করে তাকে নিয়ে যাওয়ার কথায় আর না করতে পারলেন না পরমেশ্বর | অভিবাসন দপ্তরের সাথে পরমেশ্বরের সেটেলমেন্টের জন্য রাহুল এখনো লড়ে যাচ্ছে | রেজাল্ট পজিটিভ হলে সঙ্গে থাকবে টেমস , নেগেটিভ হলে ভাগীরথি | অর্থাৎ ভিসার মেয়াদ শেষে তখন আবার দেশের কোনও বৃদ্ধাশ্রমই হবে তার ঠিকানা |

আজ টেমসের ধারে বসে বারবার জীবনকে ফিরে দেখতে মন চায়ছে | এভাবেই কলেজের ক্লাসের ফাঁকে বসে থাকতেন গঙ্গার ধারে | শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গার ধার বরাবর অনেকখানি বাঁধানো ঘাট , পাশেই তরুছায়াময় প্রশস্ত রাস্তা | প্রকান্ড সব গাছের ছায়ায় গঙ্গার ধারে আড্ডা মারা হত প্রায়ই | সে বড় সুখের দিন |

এরকমই একদিন বন্ধুরা মিলে বসে গল্প হচ্ছিল , একদল কলেজেরই মেয়েরা পাশ দিয়ে যাচ্ছিল |  চোখ আটকে গিয়েছিল সেই দলের  একজনের চোখে কয়েক মুহূর্তের জন্য | তারপর কলেজের করিডোরে বার কয়েক চোখে পড়েছে নবাগতাকে | যতবারই পাশ দিয়ে যাওয়া হয়েছে বিশেষ এক সুগন্ধীর গন্ধ নাকে এসেছে | মনে একেবারে গেঁথে ছিল সেই গন্ধ | মেয়েটির নামটাও তখনও জেনে ওঠা হয়নি , কিন্তু তার চোখে পরমেশ্বর দেখেছিল এক বিশাল কোনো বক্তব্য | এরপর একদিন সাহস করে ভেবেছিল কথা বলবে , অনেক সময় নিয়ে ভেবেছিল সে, কি ভাবে , কি কথা বলে আলাপ করা যায় | তার জন্য অনেক হোমওয়ার্ক করে অনেকটা সাহস সন্চ্ঞয়ও করে ফেলেছিল | হঠাৎ একদিন অনার্সের ক্লাসের ঘর হঠাৎ করে বদল করার নির্দেশ এল , দুটি পিরিয়ডের মাঝেই | আর অদ্ভুতভাবে ক্লাস বদলের সময় সাক্ষাৎ | জানা গেল ইতিহাস অনার্সের নতুন ছাত্রী , পাশের বন্ধুর ডাকে জানা গেল নাম তার প্রীতি |

 কিছুক্ষনের মধ্যে স্যরের উপস্হিতিতে দ্রুত ক্লাসরুমের পরিবর্তন সম্পূর্ণ হল |  পরমেশ্বর , প্রীতির ছেড়ে যাওয়া সিটেই বসবে মনস্হ করেছিল | কিন্তু প্রীতির উঠে যাওয়ার সময় একটুকরো কাগজ ছিল ঐ সিটে | স্বাভাবিক কৌতুহলে মোড়া কাগজ খুলে দেখলো তাড়াহুড়ো করে যেন কয়েক লাইন লেখা হয়েছে |

“তোমার দুচোখে ভেসে থাকা রঙ মহাসাগরের নীল
বসন্ত চায় শিমূল-পলাশ ছুঁয়ে , হই আজ রক্তিম | “

সেদিনের ক্লাসে আর মন ছিল না | ক্লাস শেষে অনেক খুঁজেও আর পাওয়া গেলনা প্রীতিকে | তারপর দিনই ছিল দোল | সেদিনই তাই কলেজ শেষে আবীর উড়ছিল ক্যাম্পাসে | পরমেশ্বরের চোখে সাগর নীল আর রক্তিম পলাশই ছিল সেদিন |  দোলের ছুটির পরদিন থেকে আর দেখা পাওয়া যায়নি প্রীতির | কলেজ ছেড়ে দিয়েছে জানা গেল পড়ে | সেসময় এমন হত প্রায়শই | মাত্র দিনকয়েকের দৃষ্টি বিনিময় আর সম্বল দুলাইন কবিতা , পরমেশ্বরের সারা জীবনের এটাই ছিল এক লুকনো গল্প , যা আজও কাউকে বলা হয়নি , নবনীতাকেও না | আর কী বা বলার ছিল , সেরকম কোনো বাস্তবতা তো ছিল না এর মধ্যে  | বরং গভীর এক নিজস্ব আবেগ ছিল , যেটা বন্ধ চোখে রোমন্হনই করেছেন পরমেশ্বর নিজস্বভাবে |




এক একসময় মানুষ কিভাবে এক জগৎ থেকে আর এক ভাব জগতে ঢুকে যায় , কোনও প্রসঙ্গ ছাড়াই তা টের পাওয়া যায়না | কিন্তু আজ পরমেশ্বর বুঝতে পারলেন কিছু না কিছু যোগসূত্র থাকেই যে কোনো ভাবনার পেছনেই |  কি এই টাওয়ার ব্রীজের কাছে এত সুবেশীমানুষজনের ভিড়ে এক বারের জন্য নাকে এল ঐ পুরনো সুগন্ধীর সুবাস , নাকি এ নেহাৎই তার বিভ্রম | এত বছর পর এত নিঁখুত ভাবে অচেনা ঘ্রানের স্মৃতি কি রয়ে যাওয়া সম্ভব ?

ভাবতে ভাবতে রাহুল চলে আসে | সাথে আরও দুজন এসেছে ওর অফিসের | দুজনেই প্রবাসী ভারতীয় |অনেকদিন থেকেই ওর এই দুই বন্ধুর , পরমেশ্বরের সাথে দেখা করার কথা | সময় ওদেরও কম তাই অফিস থেকে ফেরার পথে টাওয়ার ব্রীজ চত্ত্বরে দেখা করবে সেটাই ঠিক ছিল |
বাবা , চল একটু কফিশপে গিয়ে সবাই বসি | চারজন এখন অভিজাত রেস্টুরেন্ট স্টার বাকসে , কফি সহযোগে চলল পরিচয় , কথাবার্তা |
রাহুল পরিচয় করাল বেঙ্কটেশ আর সোহিনীর সাথে | সোহিনী বাঙালী | বেশ ভালো সময় কাটলো ওদের সাথে | ওরা সৌজন্য করে উপহারও এনেছে রাহুলের বাবার জন্য  একটি বই ও ছিল উপহারে যা আজকাল ভাবা যায় না | যাবার সময় সোহিনী বলে গেল, পড়ে জানাবেন কেমন লাগলো |
নিশ্চয় জানাবো , বলে পরমেশ্বর ছেলের সাথে ফিরে এল |
কাল উইকএন্ড , তাই রাত্রে ডিনারের পরও কিছুসময় সবাই মিলে কাটানো গেল |
আজকাল খুব হালকা ঘুম হয় , কত সময় ভেঙে গেলে আর ঘুম আসতে চায়না | আজও এমন হল | বার কয়েক ঘুমের চেষ্টায় অসফল হয়ে সোহিনীর দেওয়া বই য়ের খেয়াল হল | কী বই তাও দেখা হয়নি , বসে পড়লেন বই নিয়ে | প্যাকিং খোলা হল , কভার পেজে একগুচ্ছ পলাশ , বেশ সুন্দর কভার ডিজাইন | মাঝের কয়েকটি পাতা খুলেই বুঝলেন এটি কাব্য গ্রন্হ | রাহুল বলছিল  সোহিনী বইটা পাবলিশ করেছে , তাই আজকাল এই বইটা নিয়েই একটু ব্যস্ত থাকে , পাবলিসাইজ করে | রাহুলের  মুখে পরমেশ্বরের কবিতা পড়ার শখের কথা শুনেছে সে |
বইয়ের প্রথম কবিতাটি খুলেই চমক লাগে……

“তোমার দুচোখে ভেসে থাকা রঙ মহাসাগরের নীল
বসন্ত চায় শিমূল-পলাশ ছুঁয়ে , হই আজ রক্তিম | “

………..এতো চিরপরিচিত লাইন , এরপর বর্ধিত হয়েছে আরও দুপাতা জুড়ে | চোখ ফিরে আসে লেখকের নাম খুঁজতে , কবির নাম তো বনলতা , শুধুই বনলতা | প্রকাশকের জায়গায় সোহিনীর নাম | কোথায় কি ব্যাপার ভাবতে ভাবতে রাতে আর ঘুম এলনা | কত কি ভাবনা আসতে লাগল |
সকালে উঠেই ছেলেকে বলেই ফেললেন সোহিনীর সাথে বইটার ব্যাপারে কথা বলার আছে | রাহুল জানে তার বাবার এসবের চর্চা আছে , যা রাহুলের একেবারেই নেই | স্নানে যাওয়ার আগে সে তার ফোন থেকে সোহিনীকে ফোন করে ধরিয়ে দিলেন পরমেশ্বরকে |

আচ্ছা তুমি তো প্রকাশক , কিন্তু লেখক কে ?
বলে নিজেই লজ্জা পেয়ে বললেন , না , মানে এখানে লেখকের নাম দেখছি অবশ্যই , বনলতা | তবে আমার একটু ভাবনা আসছে যে এর আগে ওনার কোনো এরকম বই পড়েছি কি ?
কোনোরকমে কথাটা ঘুরিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন উত্তরের |
আঙ্কেল লেখক তো আমার মাসি , এতকাল ডাইরী ভরে লিখে গেছেন ঘরের কোনে বসে | এখন সেগুলি আমি প্রকাশনীর দায়িত্ব নিয়েছি , নয়ত আজ এ লেখা কোথায় হারিয়ে যেত |
নাম ? বনলতা ?
না এটা কবিতার জন্য ওনার ছদ্মনাম বলতে পারেন , আসল নাম তো প্রীতি চ্যাটার্জী |
ওনার বাড়ী ? মানে উনিও কি প্রবাসী  , নাকি দেশে থাকেন  ? বলেই আবার লজ্জা বোধ করলেন |
কিছু মনে করোনা সোহিনী , অকারনে কৌতুহল প্রকাশ করে ফেলছি | আসলে কাল পড়েছি , বেশ ভালো মানের লেখা , তাই লেখকের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে ফেললাম |
না না ঠিক আছে | উনি থাকতেন তো কলকাতায় | একা হয়ে যাওয়ায় শেষ দুটো বছরের বেশীর ভাগটাই আমার এখানে নিয়ে আসতাম | তখনই ঐ ডাইরী দেখে সির্দ্ধান্ত নিই যে ওনার বই প্রকাশ করব আমি | ভীষন খুশী হয়েছিলেন , জানেন | বনলতা নামটি উনিই বলেছিলেন | দুর্ভাগ্য আমার উনি এই বই দেখে যেতে পারলেন না |

বজ্রাহত হলেন পরমেশ্বর  | কি বা ছিল কার , কি বা হারাল , সারা জীবন ধরে শুধু একদম নিজের একটা সুখানুভূতির জোনাকী আলো ঘুরে বেড়াতো , সবসময়ের ভাবনা মোটেই ছিলনা  | পরমেশ্বর তো স্বাভাবিক নিয়মে সংসারেই জড়িয়ে ছিলেন, দায়িত্ব ও ব্যস্ততায় অবসরই ছিলনা এতদিন , তবু কোথায় ক্ষীন সুতোয় বাঁধা ছিল একটি ছোট্ট গিঁট , আর আজ সেই গিঁট যেন খুলে গেল | আর গিঁট খুলে গেলে তার অস্তিত্ব যে অবলুপ্ত হয় তাও যেন প্রমান হল |

আঙ্কেল ….আঙ্কেল… কী হল ? আমার এবার রেডী হতে হবে , পরে আবার কথা হবে | ও আর একটা কথা… কালই বলব বলে বলা হয়নি … কাল আপনি যেখানে  বসে টেমস দেখছিলেন  মাসি কিন্তু ঠিক ঐখানটাই পছন্দ করতেন বসার জন্য | প্রায় বিকেলেই উনি এখানে সময় কাটাতেন , আর আমি ফেরার পথে ওনাকে পিক আপ করে একসাথে ঘরে ফিরতাম | রাহুলের সাথে আমার পরিচয় এই বছর খানেকের  | আপনি আসার পর আমিই ওকে বলি আপনার বিকেলটা টাওয়ার ব্রীজে কাটানোর ব্যবস্হা করতে  | আপনার নিশ্চয় ভালো কাটে সময়টা ? কাল গাড়ী থেকে নেমে আপনার ঐ সীটের কাছে রাহুল নিয়ে যেতেই আমার মাসির কথা হঠাৎ মনে হয়েছিল | আচ্ছা , খুব লেট হয়ে যাচ্ছি ,পরে আবার কথা হবে , বাই আঙ্কেল |

পরমেশ্বর বাকরূদ্ধ | সমস্তটাই বুঝলেন | টেমসের জল কেন এত ভাবাল কাল , কেন পেয়েছিলেন পুরনো সুবাসিত ঘ্রান , কেন এতদিন পর ফিরে ফিরে আসছিল কলেজ জীবন | গতকাল ছিল দোলপূর্ণিমা , টাওয়ার ব্রীজের ওপর অপূর্ব দেখাচ্ছিল ফাল্গুনী চাঁদ | বিদেশে বসে টেমসের ধারে দোল পূর্ণিমার চাঁদ প্রত্যক্ষ করতে করতে  হাতে অযাচিত উপহার হিসেবে পেলেন একমুঠো পলাশ |
অজান্তে চলে এসেছেন পুরনো সুখস্মৃতির হাত ধরে দেশ ছেড়ে এত দূরে , না বুঝেই | কোনো অমোঘ শক্তিতে একই চেয়ারে বসে একই দৃশ্য উপভোগ করেছেন জীবন সায়ান্হে হয়ত একটু আগে পরে ,তাতে কি ? না জেনেই তো হয়েছে এসব …. মহাসাগরের নীল খুঁজে পেল তার রক্তিম পলাশকে |

নিজেকে খুব তৃপ্ত বোধ করলেন জীবন সায়ান্হে এসে এতবড়ো একটা সম্পূর্ণ অনুভুতির জন্য যা একান্তই নিজের | শেষ জীবনে পরমেশ্বর সাক্ষী হলেন তার জীবনের এক বিশেষ বসন্তের |

Share This Article