ভালোবাসার রং – Valobashar Rong – Valentine’s day Bangla Golpo

Bongconnection Original Published
5 Min Read

  ভালোবাসার রং – Valobashar Rong – Valentine’s day Bangla Golpo 

ভালোবাসার রং - Valobashar Rong - Valentine's day Bangla Golpo
Loading...

Valentine’s day Bangla Golpo



পাড়ার মোড়ের ফুলওয়ালী কাকিমাটা শেষ বেলী ফুলের থোকাটা বিক্রি করতে গিয়েও পাশে সরিয়ে রেখে একগাল হেসে বললে,
– “এ ফুল বিক্কিরি হবে না বাবু।”
তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে ব্যাগপত্তর গোছাতে গোছাতে মনে মনেই বকবক করতে লাগল ফুলওয়ালী,
– “মানুষটা কবে থেকে বিছানায় অসুস্থ হয়ে শুয়ে রয়েছে, গাছের ফুলগুলোও মানুষটার দেখা হয় না। খালি হসপিটাল আর ওষুধ। আজ মানুষটার মাথার পাশের জানালাটার উপর বড়ো স্টিলের বাটিটার জলে বেলীর থোকাটা ভাসিয়ে রাখব। আমার মানুষটার মনটা ভালো হবে নিশ্চিত।”


ওদের মুহুর্তটুকু বন্ধক থাক ভালোবাসার কাছে। ❤


ক্লাস সেভেনের ছেলেটাকে পড়ানো শেষ পরেই মুখচোরা কলেজ পাশ ছেলেটা মাথা নীচু করে আমতা আমতা করে বলেই ফেলল,
– “কাকিমা, আজ মাইনের টাকাটা পেলে একটু উপকার হতো।”
মিনিট পাঁচেক পর টাকাটা হাতে পেয়েই মুখচোরা ছেলেটার মুখে একগাল হাসি ফুটল,
– “বাবার শীতের শালটা কিনে তবে বাড়ি যাব। পাতলা চাদরটা গায়ে দেওয়া বের করছি এবার। খুব বকব, আমার  কথা না শুনলে।”


এই বকুনিটুকুও থাকুক ভালোবাসার রোজনামচায়। ❤


বাবা নামক মানুষটা অফিসফেরত ট্রেন থেকে নেমে ভ্যানে উঠেও নেমে গিয়ে হাঁটতে শুরু করলেন,
ভ্যানকাকু পেছন দিক দিয়ে হাঁক দিয়ে বলল,
– “ও দাদা কি হল, আজ যাবেন না?”
লম্বা চওড়া মানুষটা হেসে বললে,
– “আজ নাহয় একটু হাঁটি, শরীরটা ভালো থাকে যে হাঁটলে।”
সামনের দিকে তাকিয়ে আবার হাঁটতে হাঁটতে পকেটের মানিব্যাগে হাত রেখে ফিসফিসিয়ে উঠল,
– “মেয়েটা বড্ড নাচতে ভালোবাসে। সারাদিন কেমন ফড়িং -এর মতন নেচে নেচে বেড়ায়। ওকে নাচের ক্লাসে ভর্তি করে দেব। মাইনেটা উঠে আসবে। রোজ রোজ ভ্যানে না চড়ে হাঁটালে উপকারও হবে।”


হেঁটে ফেরার রাস্তাটুকু এগোক ভালোবাসায়। ❤

Valentine’s day Bengali Story

Loading...

বিয়ের লগ্নের মিনিট পাঁচেক আগেই খুব প্রিয় বান্ধবীটি মেয়েটার কানে কানে এসে বললে,
– “আর্য ফিরে এসেছে রে। ও জানতে পেরেছে রাহুলের সাথে তোর কোনো সম্পর্ক ছিল না, ভুল বোঝাবুঝি। বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিস এবার। একটু ভেবে দ্যাখ। গেটের বাইরে ও দাঁড়িয়ে আছে তোর জন্য।”







একগাল হেসে কনে মেয়েটা আলমারির থেকে একটা রুমালে বাঁধা এগারোটাকা বান্ধবীটির হাতে দিয়ে বলল,
– “বছর দুই আগে হাতে টাকা ছিল না। ঠাকুরকে বলেছিলাম আর্য সত্যিটা জানতে পারলে এগারো টাকার পুজো দেব। আমার তো আর হল না। আর্যকে বলিস টাকাটা দিয়ে পুজো দিতে।”
বান্ধবীটি ভীষণ অবাক হয়ে বলল,
– “তুই এই বিয়েটা করবি?”
কনে মেয়েটা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বসতে বলল,
– “যে মানুষটা আমায় বিয়ে করতে এসেছে, সেই মানুষটার চোখ ভর্তি শুধু বিশ্বাস।”


এই লগ্নটুকুও থাকুক ভালোবাসার মুহুর্তে। ❤




জে.ডি বিল্ডিং এর পাশেই বসেন রতনদা..বছর পঁউষট্টির ফুচকাওয়ালা…হাতের গুণে মন কেড়েছে জে.ডি. বিল্ডিংসহ আশে পাশের চার পাঁচটি বিল্ডিং এর মেয়েদের..সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন ই রতনদার দোকান পূর্ণ থাকে ফুচকালোভী মামনিদের আদরে…আজও তার অন্যথা হয়নি…ঠিক বিকেল পাঁচটায় দোকান দিলেন রতন বাবু..মিনিট পাঁচেক এর মধ্যেই লিয়া আর তার সহচরীরা সুবেশা হয়ে উপস্থিত রতনবাবুর স্টলে…রতন বাবু একটু থতমত খেলেন..এতজন মিলে একসাথে কেন?..কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই লিয়া রতনবাবুকে সরিয়ে নিজে হাতে ফুচকা তৈরী করতে লাগল…রতন বাবু তো হতভম্ব..কী হচ্ছে এসব!! সবার মুখে মিষ্টি হাসি…ফুচকা তৈরী করে দশটি উদ্দাম মেয়ে সকলে মিলে বলল…”নাও ..সব দিন আমাদের ঝাল খাইয়ে মারো..এবার তুমি খাও..!”.. বলে এক এক করে গুজতে লাগল বৃদ্ধের মুখে..বৃদ্ধ অবাক হলেও নারীশক্তির দাপটে টপাটপ খেতে লাগলেন লোভনীয় ফুচকা..ফুচকা খাওয়ানো শেষ করে লিয়া বলল, “ব্যাগ টা দে, মিঠু”… ব্যাগ থেকে একটা বড় ক্যাডবেরী নিয়ে বৃদ্ধের হাতে দিয়ে বলল…”আই লাভ ইউ বুড়ো”… সবাই বলল..”উই অল লাভ ইউ”…❤…পরম আনন্দে হেসে উঠলেন রতন মাঝি…সার্থক ভালোবাসার দিন!


বুড়ো মানুষটার এই হাসি টুকু থাকুক ভালোবাসার নামে ..



❤️




বাজারের ব্যাগটা নামিয়ে বাবা নামক মানুষটা ফিসফিসিয়ে মা’কে বললে,
– “পমফ্রেটের দামটা বেড়েছে আবার। আমাদের জন্য বাটা এনেছি। আর মেয়েটার জন্য একটা পমফ্রেট আনলাম। বুঝলে?”
বাবা আর মায়ের মধ্যে কি নিশ্চুপ বোঝাপড়া হলো , সেটা বাইরের কেউ বুঝতেও পারলো না । শুধু কিছুক্ষণ বাদে মা মানুষটাকে একটু  উঁচু গলায় বলতে শোনা গেল,
– “আরে বাহ্ এতো জ্যান্ত বাটামাছ গো। মেয়েটা যে কি খায় ঐ বরফের পমফ্রেট। ওর পমফ্রেটের আলাদা ঝোল করে দেব আর আমাদের বাটামাছটা কালোজিরা দিয়ে করব কিন্তু।”


বাবা -মা’র বোঝাবুঝিটুকুও ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। ❤


বড্ড সাধারণ মানুষগুলোর এই  মুহুর্তরা বাঁচুক ভালোবাসায়। ভালোবাসার আসলে অনেকগুলো রং । ভালোবাসার জন্য বিশেষ কোন দিন প্রয়োজন হয়না , প্রিয় মানুষগুলোর খুব প্রিয় অনুভূতিগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখে ।
জীবনকে উপভোগ করুন আপনার খুব প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে , দেখবেন Valentine’s Day সব দিনকেই মনে হচ্ছে ।




ধন্যবাদ ।


                   ………………


আপনার সুচিন্তিত অভিমত নীচের কমেন্ট সেকশনে জানান ।


আরো পড়ুন , 
প্রেমের গল্প তোমাতে আমাতে


Share This Article