অনুভূতির শেষপ্রান্তে – Onuvutir Seshprante

Bongconnection Original Published
4 Min Read
অনুভূতির শেষপ্রান্তে
Loading...

             

খুব ভোরবেলা যখন শুকতারা টা আকাশে তখনও জ্বলজ্বল করছে , তখন একজন নারী একজন পুরুষ তাদের গভীর আলাপনে ব্যস্ত। তাদের সামনে বয়ে চলেছে প্রশস্ত গঙ্গা । তাদের প্রেমের সাক্ষী হিসেবে শুকতারা টা তাদের দিকে নজর রাখছে যেনো । নারী পুরুষ দুজন দুজনকে আলিঙ্গন করে আবার আজ গভীররাতে অভিসারের পরিকল্পনা করতে শুরু করলো। দু একজন লোক যখন এদিকে গঙ্গার পাড়ে আসতে শুরু করলো তখন তারা খুব সাবধানে একটা আড়ালে চলে গেলো। তারপর খুব মৃদু কণ্ঠে নারীকে পুরুষ বললো – আজ রাত ঠিক 12 টা তে চলে এসো এখানেই , আমি তোমার অপেক্ষাতে থাকবো।
নারী কিছু না বলে মৃদু হেসে সম্মতি জানালো।।
রাত গভীর হলো পাখিরা নিজের বাসায় গভীর ভাবে ঘুমন্ত তখন, পূর্ণিমার আলোতে চারদিক ভরে যাচ্ছে , গঙ্গা চাঁদের আলোতে ঝিলমিল করছে তখন সেই পুরুষ কে দেখা গেলো সেই একই জায়গায় তার প্রিয়তমার অপেক্ষায় অপেক্ষারত । নারী কিছুক্ষণ পর হাঁফাতে হাঁফাতে এসে বললো, কিছু মনে করোনা গো বাড়ি থেকে সব সামাল দিতে দিতে বড্ড দেরি হয়ে গেলো যে। পুরুষ কিঞ্চিৎ বিব্রত হয়ে বললো , সব ঠিক আছে তো বাড়িতে? কেউ কিছু জানতে পারেনি তো??? নারী বললো, না না বোধহয় জানতে পারেনি !
তারপর দুজনেই আবারও তাদের গভীর প্রেমালাপ এ মত্ত হলো। জোছনা স্নাত হয়ে দুজনে তখন দুজনের ভালোবাসাতে পরিপূর্ণ , কিন্তু হঠাৎ তাদের ভালোবাসাতে ছেদ পড়ল। নারী কণ্ঠে প্রবল ভয়, সে বললো , হ্যাঁ গো আমাদের উপর কেউ যেনো নজর রাখছে!! চারদিকে দেখে নিয়ে পুরুষ বললো , ও তোমার মনের  ভয়। এ গভীর রাতে কে আসবে তোমাকে আমাকে বিব্রত করতে । প্রকৃতি মা যেখানে তার অপার সৌন্দর্য্য তে চারদিক ভরিয়ে রেখেছেন তোমার আমার জন্য , তাতে কার ক্ষমতা কারো বাঁধা দেয়ার ।। নারী ঈষৎ লজ্জা পেয়ে বলল, তুমি না সত্যিই …!
ভোর রাতে তাদের প্রেমালাপ শেষ করে দুজন যখন দুজনের যাবার পথে পা বাড়ালো আবারও দুজন দুজনকে প্রতিশ্রুতি দিতে ভুললো না মধ্যরাতে আসার।। নারী যখন বাড়ি গেলো দেখলো সেই ভোরেও তাদের গৃহে আলো জ্বলছে। কম্পিত হাতে সদর দরজা ঠেলতেই দরজা খুলে গেল । ভিতর থেকে একজন যুবক আর একজন যুবতী বেরিয়ে এসে বললো , মা বাবা তোমরা এই বয়সে এসেও এসব কিভাবে পারো??? লুকিয়ে লুকিয়ে বেশ তো দুজন যাচ্ছিলে প্রতিদিনই , ভাগ্য ভালো দিদি সেদিন দেখে আমাকে জানালো তাই কাল রাতে চুপিচুপি তোমাদের পিছন পিছন গিয়ে জানতে পারলাম তোমাদের গোপন অভিসার । বিপরীত দিকে পক্ব কেশ পঞ্চাশ ঊর্ধ দুজন বৃদ্ধ বৃদ্ধা খানিক লজ্জা পেয়ে বলল , তোরাই বা কি? মা বাবা কে লুকিয়ে নজর রাখতে হয় এমন করে? বৃদ্ধা বললো , কাল আমি ঠিকই দেখেছিলাম   
 তোমায় তখন ওই জন্যই বললাম দেখলে তো ।
বৃদ্ধ বললো হেসে তবে কি জানিস খোকা ,     
ওরকম না করলে প্রেমটা যেনো হারিয়ে যায় কোথায় বয়সের সাথে । সংসারে সবকিছুর সাথে যে ওটাও বড্ডো জরুরী । বয়স বেড়েছে বলে কি ভালোবাসা হারিয়ে যাবে?? ওটা না থাকলে তো দুজন দুজনের প্রতি দায়িত্ব টুকুই পালন করা হবে সংসার রক্ষার খাতিরে । কাজের চাপে আর তোদের খেয়াল রাখার ফাঁকে ওটাও তো বড্ডো জরুরী..তাই আমরা দুজন ভাবলাম বুড়ো বুড়ি মিলে একটু নতুন করে প্রেমটা আবার নাহয় করি নতুনভাবে। ছেলমেয়ে দুজন হেসে উঠলো তাদের বাবার একথা শুনে। তারপর বৃদ্ধবৃদ্ধা দুজনই হেসে উঠলো ওদের সাথে।।
   থাক নাহয় !
   কিছু প্রেম পুরোনো যুগের মতোই । নতুন ভোগবিলাস আর আধুনিকতার ছোঁয়া নাই বা থাকলো তাদের ভালোবাসাতে। আধুনিক প্রজন্ম তাদের দেখে আরো ভালোবাসতে শিখুক , জানুক নতুন ভাবে । ওনাদের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা টা নাহয় শুধু টাকাপয়সা তে সীমাবদ্ধ না থেকে শুধু ভালোবাসাময় ই হোক ।। ভালো থাকুক প্রবীণ প্রবীনা দের সেই খাঁটি ভালোবাসাগুলো । জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও অনুভূতিগুলো বেঁচে থাক এমনভাবেই …

ধন্যবাদ ।

                 …………….

Share This Article